পৃথিবীর সর্বনিম্ন ভূমি ও পবিত্র কুরআনের সাক্ষ্য ।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 

 পৃথিবীর সর্বনিম্ন ভূমি ও পবিত্র কুরআনের সাক্ষ্য (পবিত্র কুরআন কি বলে?)

ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের আগেই পৃথিবীর পরাশক্তি হিসেবে রোম সাম্রাজ্য (বাইজেন্টাইন) ও পারস্য সাম্রাজ্য (বর্তমান ইরান) আত্মপ্রকাশ করে। রোমের সীমানা ছিল সিরিয়া  থেকে পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত। আর পারস্যের সীমানা ছিল ইরাক থেকে পূর্বে খোরাসান (আফগানিস্তান) পর্যন্ত ।


রোম আর পারস্য উভয়েই যুগের পর যুগ ধরে পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত থাকত ৬০৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানদের সঙ্গে পার্সিয়ানদের যুদ্ধ শুরু হয় পার্সিয়ানরা একের পর এক রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নিচ্ছিল রোমানরা ছিল খ্রিস্টান, অন্যদিকে পার্সিয়ানরা ছিল অগ্নিপূজক এক পর্যায়ে যুদ্ধটা ধর্মীয় যুদ্ধে রূপ নেয় ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে পার্সিয়ানরা দামেশক, বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত দখল করে নেয়


সে সময় মক্কায় রাসুল (সা.) এর সঙ্গে মুশরিকদের নতুন এক ধরনের যুদ্ধ চলছিল। রোমানদের পরাজয়ের খবর শুনে মক্কার মুশরিকরা খুশী হয়েছিল, কারণ পার্সিয়ানরাও তাদের মতো পৌত্তলিক। অন্যদিকে মুসলিমদের সঙ্গে রোমানদের অনেক মিল, উভয়েই নবী, আসমানি গ্রন্থ ও আখেরাত ইত্যাদিতে বিশ্বাসী। তাই রোমানদের এই বিজয়ে মুসলিমরা দুঃখিত হয়েছিল। মুশরিকরা এই নিয়ে মুসলিমদের সঙ্গে ঠাট্টা করতে শুরু করে।



তখন আল্লাহ কোরআন নাজিল করলেন, ‘রোমকরা পরাজিত হয়েছে। (সুরা রুম, আয়াত: ২)
৩য় আয়াতে আল্লাহ বলেছেন রোমানরা পরাজিত হয়েছে আদনাল আরদে।




শব্দটি বহু অর্থবোধক যেখানে বুঝানো হচ্ছে রোমানরা পরাজিত হয়েছে নিম্নভূমিতে অথবা কাছাকাছি কোন ভূমিতে। সাধারণত অনুবাদকগণ এখানে নিকটবর্তী ভূমি হিসেবেই বেশি অনুবাদ করেছেন কেননা যে জায়গায় রোমানরা পরাজিত হয়েছিল তা ছিল রোমান ও আরব উভয়ের নিকটবর্তী ভূমি। যুদ্ধ ছিল মূলত ধর্ম বিষয়ক ,কারণ রোম’রা ছিল খ্রিষ্টান তাই তাদের পবিত্র স্থান ছিল জেরুজালেম যা প্রাথমিক অবস্থায় মুসলিমদের নামাযের কিবলা ছিল পরে পরিবর্তন হয়ে পবিত্র মক্কাতে হয়। আবার খ্রিষ্টানদের নবী যিশু বা ঈসা আ: এই নগরীতে জন্মগ্রহন করেন অন্য দিকে ইহুদীদের ও পবিত্র স্থান তাই তারা জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে চক্রান্ত করছে ।

জেরুজালেম (মসজিদুল আকসা) যা ইহুদী , খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের কাছে পবিত্র ভূমি ।



তবে আদনা এর অনুবাদ নিম্নাঞ্চল ও হয়ে থাকে । কারন আরবী কিংবা বাংলাতে একই শব্দে বহু অনুবাদ দেখা যায় ।
যেমন বাংলার ক্ষেত্রে - একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ :

কাঁচা

অপক্ব- কাঁচা আমের স্বাদই আলাদা।
অদক্ষ- তোমার এ কাঁচা হাতের লেখা অনেকেই বুঝবে না।
অসিদ্ধ – মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ হয়নি, কাঁচাই রয়েছে।
মাটির তৈরি – বন্যায় বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেসে গেছে।
অশুষ্ক- এ রকম কাঁচা কাঠ দিয়ে রান্না হবে না।
কাল- চল্লিশের উপরে বয়স অথচ চুল তার কাঁচাই রয়েছে।


যদিও পবিত্র কুরআনে একবারে সঠিক স্থান বলে নাই কিন্তু আমরা দেখতে পাই পবিত্র ভূমি জেরুজালেম বা মসজিদুল আল-আকসা থেকে ঐ নীম্নভূমি উপকূল দূরত্ব মাত্র ১৫ মাইল । যেখানে এক রাজ্য জয় করতে সৈন্যদল হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয় সেখানে এই দূরত্বের পার্থক্য কছিুই না ।


নিম্নে আরবি শব্দ আদনা এর বিভিন্ন অর্থ - লিংক



তাহলে এর মহান আল্লাহ্ এখানে নিম্নাঞ্চল বলতে কি বুঝানো হয়েছে ?  

কারণ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে জায়গায় রোমানরা পরাজিত হয়েছিল সে মৃত সাগরের তীর শুধুমাত্র আরব অঞ্চলে  রোমানদের দখলকৃত ভূমিগুলোই নয় বরং সমগ্র বিশ্বের বুকে সর্বাপেক্ষা নিচু শুষ্কভূমি যা প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও ৪১৫ মিটার নিচু। অর্থাৎ সমুদ্র উচ্চতাকে সমান শূন্য মিটার ধরলে ঐ স্থানটি গড় সমুদ্র উচ্চতা থেকে ৪১৫ মিটার নীচু এলাকা ।


যেমন ঢাকা শহর এর উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ মিটার । তার অর্থ হলো বঙ্গোপোাসাগর এর পানির উচ্চতা ৪ মিটার বাড়লে ঢাকা শহর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যাবে । আর পবিত্র কুরআনে বর্ণিত স্থানটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উঁচু নয় বরং ৪১৫ মিটার নীচু এলাকা যা পৃথিবীর সর্বনীম্ন স্থান।

এমন বৈজ্ঞানিক উপাত্ত দেখে বিরোধীপক্ষ প্রথমে বলেছিল আরবিতে আদনা বলতে শুধুমাত্র কাছাকাছি কিংবা নিকটবর্তী বুঝায় কিন্তু যখন দেখা গেল প্রায় সকল আরবি ডিকশনারিতেই শব্দটি আছে তখন তারা মত পালটিয়ে বলল অধিকাংশ কোরআনের অনুবাদক এখানে নিকটবর্তী বলে বর্ণনা করেছেন, তাই এটাই সঠিক। আসলে তারা বুঝতেই পারছেনা যে কোরআনের ভাষার সৌন্দর্য্য এখানেই যে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে একই শব্দ তার অপরাপর অর্থ গ্রহণ করে বিজ্ঞানের প্রামাণিক সাক্ষী হচ্ছে।



আবার রাসূল সা: বলেছেন - কুরআন এর আয়াত কখনও পুরানো হবে না , তুমি যখনই পড়বে তখনই নতুন স্বাদ পাবে (সুবহানাল্লাহ্)।

নিজেদের যুক্তির অসাড়তা টের পেয়ে এবার অবিশ্বাসীরা বলল কোরআন বলেছে মৃত সাগরের তীর সর্বাপেক্ষা নিচু ভূমি কিন্তু  বিজ্ঞান বলছে এন্টার্টিকার বেন্টলে সাব্লেসিয়া ট্রেন্স হচ্ছে সর্বাপেক্ষা নিচু ভূমি। তাদের যুক্তি ঠিকই আছে তবে তারা  হয়ত বুঝতে পারেনি যে কোরআন শুষ্ক ভূমির কথাই বলেছে বরফের নীচের ভূমির কথা আলোচনা করেনি। কারন পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে মানুষের জন্য , অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় ।

এবার আসি প্রমাণে -
১. আপনি সার্চ ইঞ্জিনে খোঁজ করুন - Lowest Land Points Below Sea Level
২. অথবা ম্যাপে ক্লিক করুন যেখানে ক্লিক করবেন সেই স্থানের ইলিভেশন বলে দিবে -







(সংক্ষিপ্ত)
মোহাম্মদ মুদ্দাচ্ছির ইসলাম পাটওয়ারী
B.Sc in Environmental Science ( NSTU )
M.Sc in WRD (BUET) [On-going]


Comments

  1. মহিলা সাহাবীদের নামের তালিকা দেখুন। ইসলামের সৌভাগ্যবান ৭৯ জন মহিলা সাহাবীদের নাম
    https://islami-bangla.blogspot.com/2020/02/blog-post_139.html

    ReplyDelete

Post a Comment

মন্তব্যঃ

Popular posts from this blog

সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী খেতে পারবেন ?

পৃথিবী গোলাকার না ডিম্বাকার!

নূহ আ:এর নৌকা ও বিশ্ব স্বীকৃতি ।