সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী খেতে পারবেন ?
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী
খেতে পারবেন (পবিত্র কুরআন কি বলে?)।
সমুদ্রে আছে নাম জানা , অজানা লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী । আমাদের বাংলাদেশে অবশ্য সামুদ্রিক মাছ খুব কম
আহরণ হয় তাই আমরা এর সাথে এত পরিচিতি নেই কিন্তু যারা উপকূলীয়েতে বসবাস করে তাদের কাছে
অসংখ্য প্রাণীর সমাহার ঘটে ।
অনুবাদ : দুটি সমুদ্র সমান হয় না-একটি মিঠা ও তৃষ্ণানিবারক এবং অপরটি লোনা।
ঊভয়টি থেকেই তোমরা তাজা গোশত আহার কর ,,,, (সূরা ফাতির ৩৫:১২)।
এখানে সমুদ্রের প্রাণী
আহারের ক্ষেত্রে মাছ শব্দটি (حِيتَانُهُمْ = দেখুন , সূরা আরাফ ০৭:১৬৩) না ব্যবহার করে করেছেন প্রাণীর গোশতের
(لَحْمًا) সাথে
। যেমন সূরা আল-ওয়াকে’য়া তে বলা আছে , (থাকবে) তাদের মনের চাহিদা মোতাবেক (রকমারী)
পাখির গোশত (৫৬:২১)।
তার অর্থ মহান আল্লাহ্
জানেন সমুদ্রের সকল মাছের মধ্যে কেবল মাছের বৈশিষ্ট্য থাকবে তা নয় বরং মাছের চেয়েও
ভিন্নি চরিত্রের সমাবেশ ঘটবে (যেমন অক্টোপাস , ঝিনুক ,উড়ুক্কু মাছ , তিমি ইত্যাদি
) , এবং ঐ সকল প্রাণীও খাওয়া যাবে । এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পরে আসতেছে ।
মহান আল্লাহ্ আরো বলেন
:
অনুবাদ : তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য ভক্ষণ বৈধ করা হয়েছে
; তোমাদের ও মুসাফিরদের জন্য ,,,,, (সূরা মায়েদা ০৫:৯৬)।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা :
১. যেহেতু সামুদ্রিক সফরে
অনেক সময় পাথেয় শেষ হয়ে যায় এবং আহার সংগ্রহের জন্য জলজ প্রাণী শিকার করা ছাড়া আর কোন
পথ থাকে না, তাই সামুদ্রিক শিকার হালাল করা হয়েছে ৷(তাফহীমুল কুরআন ।)
২. صيد ( শিকার
) যা বুঝায় জীবিত প্রাণী কিন্তু আয়াতে এই শব্দ ব্যবহার না হয়ে হয়েছে طَعَامُهُ , এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য
হচ্ছে মৃত (মাছ ইত্যাদি) যাকে সমুদ্র কিনারায় নিক্ষেপ করে বা পানিতে ভাসে ।(তাফসীর
আহসানুল বায়ান ।)
৩. হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনায় রয়েছে , এই আয়াতের
ব্যাখ্যায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)
বলেন ‘(صَيْدُ الْبَحْرِ) সাইদুল বাহর’ অর্থ ওই সকল ভক্ষণযোগ্য প্রাণী
যা সমুদ্রে বসবাস করে । আর ‘(وَطَعَامُهُ) ত্বোয়াম’ অর্থ ওই সকল ভক্ষনযোগ্য প্রাণী যাকে
সমুদ্র তটভূমিতে নিক্ষেপ করে । হযরত উমর (রাঃ)
একই কথা বলেছেন । ইবনে আব্বাস (রাঃ) , আবু হুরাইয়া (রাঃ) , এবং ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন
– যে সকল মৃত প্রাণী সমুদ্রতরঙ্গ কতৃর্ক
বেলাভূমিতে নিক্ষিপ্ত হয় তাদের (وَطَعَامُهُ) ত্বোয়ামুল বাহর বলে ।(তাফসীর মাযহারী ।)
৪. ইবনে জারীর (রঃ) বলেন
যে, আবদুর রহমান ইবনে আবূ হুরাইয়া (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ সমুদ্র
বহু মাছকে তীরে নিক্ষেপ করে , আমরা কি তা খেতে পারি ?তিনি উত্তর দিলেন না । অতঃপর তিনি
বাড়িতে আসেন এবং কুরআন হাতে নেন ও সূরা মায়েদা পাঠ করেন তিনি এ আয়াতে (৯৬ নং আয়াত)
এসে বলেন বলে দাও – ওটা খাও , কেননা সমুদ্রের জিনিসকে আল্লাহ্ পাক (طَعَامُهُ) ত্বোয়াম বলেছেন । ইবনে জারীরও একথাই বলেছেন
(طَعَامُهُ) ত্বোয়াম দ্বারা সমুদ্রের মৃত মৎসকে / প্রাণীকে
বুঝানো হয়েছে।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত
, রাসূল সাঃ আমাদের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় সেনাবাহিনী আমাদের প্রেরণ করেন আমরা ছিলাম
তিনশ’ । পথেই আমাদের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে আসে ।পরে আমরা সমুদ্র তীরে উপনীত হই এবং দেখলাম
উঁচু টিলার মত কি একটা দেখা গেল । আমরা সেখানে গিয়ে দেখি একটি সামুদ্রিক জন্তু (তিমি
মাছ) মৃত অবস্থায় পড়ে আছে । পরে তার গোশত খাই এবং তথায় এক মাস অবস্থান করি ।এত বড় বড় টুকরা আমরা কেটেছিলাম যে ,ঐগুলোকে গরু
বলে মনে হচ্ছিল । পরে অ তার অবশিষ্ট গোশত শুকিয়ে পাথেয় বানিয়েছিলাম এবং মদীনায় পৌঁছে
রাসূল
সাঃ কে বললে তিনি বললেন ‘ঐ আহার্য আল্লাহ্ তোমাদের জন্যেই বের করে ছিলেন ।তোমাদের কাছে
কি ওর কিছু গোশত আছে কি যা আমাকে খাওয়াতে পার ।’
কোন কোন ফিকাহ্ শাস্ত্রবিদ
এ আয়াত হতে দলীল গ্রহকরেছেন যে, সমস্ত সামুদ্রিক জীব খাওয়া যেতে পারে । কোন জীবই এর
বহির্ভূত নয় ।
ইমাম আবূ হানিফা (রাঃ)
বলেন, সমুদ্রের যে মাছ মরে যাবে সেটা খাওয়া হালাল নয় । (তফসীর ইবনে কাছির ।)
এবার দেখি আমাদের সার্বজনীন
নেতা মুহাম্মদ সাঃ কি বলেছেন ?
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা
সমুদ্রে ভ্রমণ করি। আমাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে থাকি। এ পানি দ্বারা যদি আমরা
উযূ করি তবে (পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে) আমরা পিপাসায় কষ্ট পাবো। (এমতাবস্থায়) আমরা কি
সমুদ্রের পানি দ্বারা উযূ করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং সমুদ্রের মৃত প্রাণীও হালাল। সমুদ্রের
মৃত প্রাণী ফুলে উঠার পূর্ব পর্যন্ত হালাল।
(ihadis
, সুনানে আন-নাসায়ী ,অধ্যায় পবিত্রতা , হাদিস নং
৫৯)
আরো দেখুন [( ihadis , সুনানে আবু দাউদ ,অধ্যায় পবিত্রতা , অনুচ্ছেদ-৪১ ,সমুদ্রের পানি দ্বারা উযু করা , হাদিস নং ৮৩)
, ( ihadis , জামে' আত-তিরমিজি , অধ্যায় পবিত্রতা , অনুচ্ছেদ – ৫২ ,সমুদ্রের পানি পবিত্র , হাদিস নং ৬৯),
( ihadis ,
সুনানে আন-নাসায়ী, অধ্যায় পানির বর্ণনা , অনুচ্ছেদ - সমুদ্রের পানি দ্বারা উযূ করা
, হাদিস নং ৩৩২
)]
তাহলে কোন কোন প্রাণী (স্থল) মহান অল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে আমাদের জন্য
হারাম বা নিষিদ্ধ করেছেন ?
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্
বলেনঃ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে ;
(ক) মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোশ্ত, আল্লাহ
ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব , এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে
বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব , আর যা কোন বেদীমূলে
যবেহ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে৷) এ ছাড়াও শর নিক্ষেপের মাধ্যমে
নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয় ।
(খ)
তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য (উপরের হারাম বর্ণনা থেকে)
থেকে কোন একটি জিনিস খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিসন্দেহে আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী (সূরা মায়েদা ০৫:০৩
, আরো দেখুন ০২:১৭৩)৷
[এই আয়াতে তিনটি শর্ত সাপেক্ষে হারাম জিনিসের ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷এক যথার্থ অক্ষমতার মুখোমুখি হলে,যেমন ক্ষুধা
বা পিপাসা প্রাণ সংহারক প্রমাণিত হতে থাকলে,অথবা রোগের কারণে প্রাণনাশের আশংকা থাকলে
এবং এ অবস্থায় হারাম জিনিস ছাড়া আর কিছু না পাওয়া গেলে৷ দুই, মনের মধ্যে আল্লাহর আইন ভংগ করার ইচ্ছা পোষণ না করলে৷ তিন, প্রয়োজনের সীমা অতিক্রম না করলে যেমন
কোন হারাম পানীয়ের কয়েক ফোঁটা বা কয়েক ঢোক পান করলে অথবা হারাম খাদ্যের কয়েক মুঠো খেলে
যদি প্রাণ বাঁচে তাহলে বেশী ব্যবহার না করা৷ (তফিহীমুল কুরআন ।)]
তাহলে দেখলাম পবিত্র কুরআনে
হারাম কে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে । যেমন শুকর , রক্ত , আল্লাহ্’র নাম ছাড়া জবাই
করলে , হিংস্র
জানোয়ার (বাঘ ,শিয়াল ,নেকড়ে ইত্যাদি) , মৃত প্রাণী ইত্যাদি । আবার ধরুন আপনার এমন রোগ
হয়েছে বা কোন স্থানে হারিয়ে গেছেন ফলে আপনার সামনে এসকল হারাম ছাড়া আর কিছু নেই তাহলে
সীমালঙ্ঘন না করে মহান আল্লাহ্ তা খাবার অনুমতি দিয়েছেন (সুবহানাল্লাহ্) ।
তাহলে হালাল কোন কোন প্রাণী
? সূরা মায়েদার পরের আয়াতে বলা আছে (০৫:০৪) ; মহান আল্লাহ্
বলেনঃ লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করেছে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে ? বলে দাও, তোমাদের
জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র জিনিস হালাল করা হয়েছে,,,,,
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা
হয় সকল কিছুই পাক বা হালাল তবে সেগুলো হারাম যা কুরআনে হরাম বলে বর্ণিত এবং অপবিত্র
ও নোংরা । যেমন চিকা , কাক , ইঁদুর ইত্যাদি ।
এবার দেখি রাসূল (সাঃ) এর ভৌগলিক (মরুভূমি) এলাকাতে তিনি কি কি খাবারের
অনুমতি দিয়েছেন ?
১. খরগোশ এর ক্ষেত্রেঃ আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমরা মাররুয যাহরান নামক স্থানে একটি খরগোশের শিকার করলাম এবং আমরা
উভয় রান ও নিতম্ব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাঠালেন। তিনি তা
গ্রহণ করেন (ihadis
সহিহ্ বুখারী , অধ্যায় যবেহ ও শিকার করা , হাদিস নং ৫৪৮৯
)।
২.গুঁই সাপ এর ক্ষেত্রেঃ ইব্নু ‘উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; গুঁই সাপ ( যব্ব ) আমি খাই না, আর হারামও বলি না। (ihadis সহিহ্ বুখারী , অধ্যায় যবেহ ও শিকার করা ,হাদিস
নং ৫৫৩৬
, ৫৫৩৭
। ihadis সহিহ মুসলিম , অধ্যায় শিকার ও যবেহকৃত জন্তু এবং
যেসব পশুর গোশত খাওয়া হালাল , হাদিস নং ৪৯২১
, ৪৯২২)।
৩. ঘোড়ার ক্ষেত্রেঃ আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া
নহর (জবাই) করলাম এবং সেটি খেলাম (ihadis সহিহ্ বুখারী , অধ্যায় যবেহ ও শিকার করা ,হাদিস
নং ৫৫১৯
। ihadis সহিহ মুসলিম , অধ্যায় শিকার ও যবেহকৃত জন্তু এবং
যেসব পশুর গোশত খাওয়া হালাল , হাদিস নং ৪৯১৯)।
৪. গাধার ক্ষেত্রেঃ হাদীসে গাধার মাংশ
খেতে কঠোর ভাবে নিষেধ আছে ,তবে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণ বলেন তখনকার সময়ে বাহন এর সংখ্যা
কমে যেতে পারে বলে রাসূল সাঃ গাধাকে জবাই করতে নিষেধ করেছেন। (ihadis সহিহ মুসলিম , অধ্যায় শিকার ও যবেহকৃত জন্তু এবং
যেসব পশুর গোশত খাওয়া হালাল , হাদিস নং ৪৯১১
, ৪৯০৫
,৪৯০৮)
।
সিদ্ধান্তঃ
(ক) সমুদ্রে সকল জলজ প্রাণী হালাল (যা বিষাক্ত
নয়) যদিও তারা মারা যায় (সমুদ্রের মৃত প্রাণী ফুলে উঠার পূর্ব পর্যন্ত হালাল।)।
(খ) স্থল প্রাণীর ক্ষেত্রে হারামের বিষয়
গুলো মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলে দেওয়া আছে , আর অন্য প্রাণীরা হালল যদি তারা নোংরা
ও অপবিত্রতা না থাকে ।
(সংক্ষিপ্ত)
মোহাম্মদ
মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
এনভায়রনমেন্টাল
সাইন্স
নোয়াখালী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।
Comments
Post a Comment
মন্তব্যঃ