সমুদ্রের গভীর অন্ধকার ও আলোর প্রকৃতি ।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 

সমুদ্রের গভীর অন্ধকার ও আলোর প্রকৃতি (পবিত্র কুরআন কি বলে?)


এই পানির বিরাট অংশ দখল করে আছে সাগর ও মহাসাগর। এই সাগর শব্দটি পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ২৫টি সূরায় ৪০ বার এসেছে।

পূর্বে মানুষের পক্ষে সর্বোচ্চ ২০-৩০ মিটার পর্যন্ত যাওয়া যেতো। মানুষ, বিশেষত: যারা সমুদ্রে মুক্তা সংগ্রহ করে, সাধারণত সমুদ্রের ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত গভীরে ডুব দেয়, যেখানে তারা সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পায়। কেউ যদি এর বেশী যায় তাহলে পানির চাপ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে কানের পর্দা ফেটে যায় ও মানুষ মারা যায় ।






যখনি আলোক রশ্মি পানিতে এসে পড়ে তখন তা সাতটি রংয়ে বিন্যাস্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে শোষিত হয়ে সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করতে থাকে। তরঙ্গ  দৈর্ঘ্য এর পার্থক্য কারণে নিদির্ষ্ট বর্ণের আলোক রশ্মি পানিতে বেশী বেশী যেতে পারে না । যেমন , প্রথম উপরিস্তরের ১০ মিটারে লাল রং শোষিত হয়। কোন ডুবুরী সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরি ভাগের ৩০মিটার গভীরে যদি কোন আঘাত পেয়ে শরীর থেকে রক্ত বের হয় তা সে দেখতে পাবে না। কারণ ঐ গভীরতায় আলোর লাল রং পৌঁছায় না।








অনুসন্ধানে দেখা যায়  সূর্যের আলো গড়ে ২৫০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে । যেখানে শুধু নীল আলো পৌঁছানো সম্ভব । অন্য বাকী আলোক রশ্মি আগেই পানিতে শোষিত হয়ে যায় । তবে পানির পরিষ্কার এর উপর ভিত্তি করে এই গভীরতা আরো কম বা বশেী হতে পারে । উপরের চিত্রকে ধরলে আমরা বলতে পারি - তার অর্থ ২৫০ মিটার এর নীচে আর কোন আলোরশ্মি সমুদ্রে পৌঁছায় না । এর পর শুরু হয় আস্তে আস্তে গাঢ় অন্ধকার ।



উপরের টেবিল থেকে দেখা যাচ্ছে - সমুদ্রের উপরিভাগ এ কি শতাংশ হারে আলো শোষিত হচ্ছে 


এভাবে একের পর এক সব রং শোষিত হয়ে যায়। অর্থাৎ সাগরের এক এক স্তরে এক এক রং শোষিত হওয়ার ফলে স্তরীভূত অন্ধকার সৃষ্টি হয় এবং তলার দিকে অন্ধকার ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হয়ে সব শেষে কঠিন অন্ধকার আবির্ভূত হয়। ১০০০ মিটারের নিচে সম্পূর্ণ অন্ধকার।

পবিত্র কুরআনে সাগরের অতল গভীরে অন্ধকারের তিন প্রকার বলা হয়েছে :

প্রথম ধরনের অন্ধকারঃ সাধারণতঃ সমুদ্রের ১০ মিটার গভীরতায় লাল ৩০ মিটারে কমলা, ৫০ মিটারে হলুদ, ১০০ মিটারে সবুজ এবং ২৫০ মিটারে নীল আলো অদৃশ্য হয়ে যায় এরপর মাছ পর্যন্ত নিজের শরীরের আলোর সাহায্য ছাড়া দেখতে পায় না কারণ গভীর সমুদ্রের তলদেশ সম্পূর্ণ অন্ধকার অন্ধকারই হলো প্রথম ধরনের অন্ধকার


২য় ধরনের অন্ধকারঃ সাগরের উপরিভাগ শান্ত হওয়ার পরিবর্তে বাতাস বা অন্য কারণে যদি ঢেউ এর উপরে ঢেউ হয় তাহলে সূর্যের আলোর অধিকাংশই প্রতিফলিত হয়ে ঢেউ এর হেলানো দিক দিয়ে অপসৃত হয়ে যায়, এবং আলোর পরিমাণ দারুণভাবে হ্রাস পায়। এই সময় সাগরের তলদেশের অন্ধকার অনেক বৃদ্ধি পায়। একে বলে দ্বিতীয় ধরনের অন্ধকার।

৩য় ধরনের অন্ধকারঃ মেঘ হলো ঘনীভূত জলীয় বাষ্পের সমষ্টি। উপর থেকে সূর্যের আলো যখন একে ভেদ করে তখন আলো প্রতিফলিত হয়ে যায়। ফলে সূর্য-কিরণের বড় অংশটা মেঘ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ঢেউ এর উপর পড়ে কদাচিৎ পানির গভীরতা অতিক্রম করতে পারে। ফলে সাগরের পানিতে আলোর প্রবেশের পরিমান আরো কমে যায় । একে বলে তৃতীয় ধরনের অন্ধকার।


মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেন -


অথবা (অবিশ্বাসীদের অবস্থা) মহাগভীর সমুদ্র তলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের উপর স্তর, যদি একজন মানুষ হাত বাড়ায় তা আদৌ সে দেখতে পাবে না (আন-নূর , আয়াত নং ৪০ )।

এখানে لُّجِّىٍّ এর অর্থ হচ্ছে অতল , গভীর , অগাধ ।

এ আয়াতের অর্থ  ব্যাখ্যা করলে আমরা পাই কেউ যদি সমুদ্রের গভীরে যায় যায় তাহলে সেই স্থানে আর কোন আলো যায় না , আবার যদি সমুদ্রের উপরে বা গভীরে টেউ শুরু হয় তাহলে আলো আরো বেশী প্রতিফলিত হয় যার ফলে সমুদ্রের গভীরে পৌঁছানো আলোর পরিমান আরো কমে যায় তার উপর যদি আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হয় তাহলে সমুদ্রের গভীরে যতুটুকু আলো পৌঁছাবার কথা সেখানে আলোর পরিমান আরো কমে যায় ফলে কেউ যদি সমুদ্রের গভীরে গিয়ে (ডুবুরী হিসেবে) হাত বের করে তাহলে অন্ধকারের জন্য সে তার হাতকে দেখতে পারবে না ।

সুবহান্নাল্লাহ্ মহান আল্লাহ্ কত সুন্দর ভাবে অলোর প্রকৃতি বর্ণনা করেছেন ।  


রেফারেন্স 1. Essentials of Oceanography by Tom Garrison , fifth edition (page : 138) ,Orange Coast College (University of Southern California)




অতি সংক্ষিপ্ত :
মোহাম্মদ মুদ্দাচ্ছির ইসলাম পাটওয়ারী
B.Sc in Environmental Science ( NSTU )
M.Sc in WRD (BUET) [On-going]

Comments

Popular posts from this blog

সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী খেতে পারবেন ?

পৃথিবী গোলাকার না ডিম্বাকার!

নূহ আ:এর নৌকা ও বিশ্ব স্বীকৃতি ।