মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে অন্তরায় ।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 


মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে অন্তরায় । (পবিত্র কুরআন এর সাক্ষ্য?)





মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন , তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন , উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না (সূরা আর রহমান ৫৫:১৯-২০)।

আবার অন্য আয়াতে বলেন , দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন (২৭:৬১)।

প্রাথমিক যুগের তাফসীরকারকরা পানির দুটো ধারার দুটো বিপরীতমুখী অর্থের ব্যাখ্যা করতে পারে নাই কারন এটা কি ভাবে সম্ভব যে ,  তারা মিশে একাকার হয়ে যায়,অথচ উভয়ের মধ্যে রয়েছে আড়াল !

আবার রাসূল সাঃ বসবাস করতেন মরুভূমিতে যেখানে না ছিল কোন নদীর প্রবাহ । আবার উনার বাসস্থান মক্কা থেকে লোহিত সাগর ছিল ৭৫ কি.মি দূরে । যেখানে লোহিত সাগরের সাথে আর কোন অন্য সাগরের সংযোগ নেই । তাই প্রথম দিকে এ আয়াতের তাফসীর অনেকটাই অজ্ঞাত ছিল ।

মহান আল্লাহ্ বলছেন তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন , উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না (সূরা আর রহমান ৫৫:১৯-২০)।  

এ আয়াত কে বিবেচনা করলে দেখতে পাই , মক্কা বা মদীনার পাশে কেবল মাত্র একটা দরিয়া / সমুদ্র ছিল তাও আবার শহর থেকে অনেক দূরে ছিল । অথছ মহান আল্লাহ্ বলছেন পাশাপাশি দুই দরিয়ার মিলনস্থল যা সেখানে এ অবস্থা ছিল না । অন্যদিকে এ বিষয় গুলো আবার তা খালি চোখে অনুধাবন করা মোটেই সম্ভব না ।

এজন্য প্রথমদিকের তাফসীকারকগণ এর তেমন কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারে নাই ।


আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে,যেখানে দুসাগর এসে মিলিত হয় সেখানে উভয়ের মাঝে একটি আড়াল বা অন্তরায় থাকে।ঐ অন্তরায় দুসাগরকে বিভক্ত করে রাখে।ফলে দেখা যায়,প্রত্যেক সাগরের রয়েছে নিজস্ব তাপমাত্রা,লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব। উদাহরণস্বরূপ, ভূমধ্যসাগর তারেক পাহাড় বা জিব্রাল্টার হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। আটলান্টিক মহাসাগরের ভিতরে তা কয়েকশত মাইল পর্যন্ত বয়ে গেছে প্রায় ১০০০ মিটার গভীরতাসহ। অথচ, তার ভিতরে বর্তমান রয়েছে নিজ নিজ উষ্ণতা, লবণাক্ততা ও ঘনত্বসহ অন্য সব গুণাবলি। এর পুরো স্থানেই রয়েছে ভূমধ্যসাগরের পানি।

চিত্র : ভূমধ্যসাগরের পানি জিব্রাল্টার প্রণালী হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করেছে  । অথছ দুই সাগরের পানি একে অপরের উপর নিজ প্রবেশ করা সত্বেও গুণাবলি তথা নিজস্ব উষ্ণতা, লবণাক্ততা ও ঘনত্ব আলাদা আলাদা বজায় রাখছে ।। এমনটি হয়েছে উভয়ের মধ্যকার অন্তরালের কারণে। (Ref : Marine Geology, Kuenen, p.43)

[নোট : আরেকটা কথা বলে রাখি জিব্রাল্টার নামটি আরবি জাবাল তারিক থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এর অর্থ "তারিকের পাহাড়"।,তারিক বিন জিয়াদের নামে এটির নামকরণ হয় যিনি স্পেন বিজয় করেছিলেন । এটি বর্তমানে কৌশলগত ভাবে ইংল্যান্ড এর দখলে ]

আবার দেখুন পৃথিবীর সব বড় বড় নদী প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ ভাবে সাগরে এসে মিশেছে । আবার জোয়ার ভাটা হলে নদীর পানির উচ্চতার অনেক পার্থক্য দেখা যায় তার পরেও কি শুনেছেন সাগরের সব পানি নদীতে এসে সব মিষ্টি কে লবনাক্ত করে দিয়েছে !! না । কারণ সব বিছু মহান আল্লাহ্ নিয়ন্ত্রণ করছেন । আর তিনিই এসকল বিষয় সবচেয়ে ভাল জানেন ।

মোহনাস্থল ( লবনাক্ততা ppm এ প্রকাশ) মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির পার্থক্য । (Introductory Oceanography, Thurman, p. 301) ।

সব কিছুকে লক্ষ্য রেখে মহান আল্লাহ্ বলেন ,


তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল (২৫:৫৩)।









(অতি সংক্ষিপ্ত)

মোহাম্মদ মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।

Comments

Popular posts from this blog

সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী খেতে পারবেন ?

পৃথিবী গোলাকার না ডিম্বাকার!

নূহ আ:এর নৌকা ও বিশ্ব স্বীকৃতি ।