মৌমাছির যোগাযোগের মাধ্যম ও গতিপথ ।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 

মৌমাছির যোগাযোগের মাধ্যম ও গতিপথ (পবিত্র কুরআন কি বলে?)





একটি কবিতা আমরা প্রায় সবাই জানি , আর তা হলো “কাজের লোক”

মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি' নাচি'
দাঁড়াও না একবার ভাই''
ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই

আসলে মৌমাছি খুবই ব্যস্ত থাকে । মৌমাছি আসলে কেমন এ নিয়ে বিংশ শতাব্দীর আগে তাদের জীবন চক্র নিয়ে সুস্পষ্ট কোন ধারনা ছিল না । স্বাভাবিক নিয়মে প্রথম দিকের বিজ্ঞানীরা মনে করত মৌমাছি দুই ধরনের একটি হলো পুরুষ যার কাজ হচ্ছে মৌচাক বানানো ,মধু সংগ্রহ আর বাচ্চা দেখাশোনা ইত্যাদি । আর অন্যটি হলো স্ত্রী যার কাজ হলো শুধু সন্তান উৎপাদন ও লালন পালন ।

যেমন শেক্সপিয়ার ১৫৯৭ সালে একটি নাটক লিখেছিলেন যার নাম “Henry The Fourth” তিনি তাতে লিখেন পুরুষ মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে এবং তাদের একজন রাজা থাকে। দিনশেষে সব সৈনিক মৌমাছিদের এই 'রাজা' মৌমাছির কাছে এসে কৈফিয়ত দিতে হত কি কি কাজ তারা পুরোদিনে করেছে। তার মানে কর্মী মৌমাছিদের তখনকার সবাই পুরুষ ভাবত ।


কিন্তু ১৯৭৩ সালে অষ্ট্রিয়ান বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch (কার্ল ফন ফ্রিস্ক) 'Physiology or Medicine' বিষয়ে সফল গবেষণার জন্য চিকিৎবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।তার গবেষণার বিষয় ছিল 'মৌমাছির জীবনচক্র'।

তিনি এই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন যার নাম “DECODING THE LANGUAGE OF THE BEE (December 12, 1973
লিংক )’’ তিনি দেখিয়েছেন প্রমান করে দেখিয়েছেন যে, মৌমাছি তিন ধরনের।

১ ম  - স্ত্রী মৌমাছি।এদের কাজ শুধু সন্তান উৎপাদন। আর কোন কাজেই এরা অংশগ্রহণ করেনা।
২য় - হচ্ছে- পুরুষ মৌমাছি।এদের কাজ হচ্ছে শুধু স্ত্রী মৌমাছিদের (Queen bee) সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রজনন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা।তাদের এখানেই সীমাবদ্ধ।
৩য় -  হচ্ছে এরা স্ত্রী মৌমাছি কিন্তু বন্ধ্যা। এরা কখনই সন্তান উৎপাদন করতে পারেনা। এদের অন্য নামে বলা হয়- 'কর্মী মৌমাছি'। মৌচাকের প্রায় ৯৯ ভাগ মৌমাছিই কর্মী মৌমাছি এবং সকল কর্মী মৌমাছিই নারী।

তাহলে দেখা গেল কর্মী মৌমাছিরাই সকল কাজ করে থাকে ।

তাহলে পবিত্র কুরআন কে পরখ করি আসলে সে কি বলে ? কর্মী মৌমাছিরা কি আসলে পুরুষ না মহিলা ?
মহান আল্লাহ্ বলেন : সূরা নাহল , সূরা নং ১৬ : ৬৮. আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর ।

তার পর ৬৯ নং আয়াতে বলেন :


এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার সহজ পথে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (১৬:৬৮-৬৯)

আপনি যদি ৬৮ নং আয়াত দেখেন তাহলে দেখবেন সেখানে ইত্তাখিজ শব্দটি না ব্যবহার হয়ে ইত্তাখিজি শব্দটি ব্যবহার হয়েছে । আর এখানে ইত্তাখিজি হচ্ছে মৌমাছির স্ত্রী লিংঙ্গ !

আবার ৬৯ নং আয়াতে দেখলে পাই ;

১. খাবার এর ক্ষেত্রে : আরবী ‘কুলি মহিলা বাচক ; আর ‘কুল পুরুষ বাচক । কিন্তু পবিত্র কুরআনে ব্যবহার হয়েছে ‘কুলি (মহিলা বাচক)

২. পথ অনুসরণ : আরবী ‘উসলুকি মহিলা বাচক ; আর ‘উসলুক পুরুষ বাচক । কিন্তু পবিত্র কুরআনে ব্যবহার হয়েছে ‘উসলুকি (মহিলা বাচক)

৩. তাদের পেট : আরবী ‘বুতুনিহা মহিলা বাচক ; আর ‘বুতুনিহিম পুরুষ বাচক । কিন্তু পবিত্র কুরআনে ব্যবহার হয়েছে  ‘বুতুনিহা (মহিলা বাচক)

চিন্তা করুন পবিত্র কুরআন বা নবী মুহাম্মদ সাঃ এর মাধ্যমে যদি তাদের পুরুষ বলা হত তাহলে এতদিনে কুরআনকে ভুল বলে অ্যাখ্যা দেওয়া হত !!!

এজন্যই মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন : নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ-যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন। (৫৬:৭৬-৭৭)

এবার আসি , মহান আল্লাহ্ কেন বললেন আপন পালনকর্তার সহজ পথে চলমান হও (১৬:৬৯) । এটাকে সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় মৌমাছির নৃত্ত (The Waggle Dance) এর সাহায্যে । এটিও আবিষ্কার করেন কার্ল ফন ফ্রিস্ক । এই নাচের মাধ্যমে তারা নিজেদের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। কোন মৌমাছি যখন মধু আহরনের জন্য মৌচাক থেকে বহুদূরে চলে যায় এবং যখন সে ফুলের সন্ধান পায় তখন আবার মৌচাকে এসে আবার সবাইকে জানিয়ে দেয় সেই ফুলের উৎস স্থল । আর তা করে নৃত্তের মাধ্যমে । সে যখন খাবারের উৎস খুঁজে পায় তখন মৌচাকে এসে নাচের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেয় ।


যেমন ; মৌমাছির নাচের সময়ব্যাপ্তি এবং কম্পনের  সংখ্যা দিয়ে সে বোঝায় ঠিক কত দূরে আছে ফুল এবং ফুলে কি পরিমাণ মধুর নির্যাস রয়েছে, উদাহরনে বলা যায় ১ সেকেন্ডের দোলন বোঝায় উৎস রয়েছে ১ কিমি দূরে। আর দিক নির্নেয় এর জন্য সে সূর্য কে ব্যবহার করে থাকে । (Waggle Dance Video)


সবচেয়ে অবাক করার বিষয় , সে তার বাসা থেকে বের হলে আঁকাবাঁকা অনেক পথ ধরে এগুতে থাকে কিন্তু মৌচাকে এসে ফুলের উৎস সম্পর্কে সে সবচেয়ে নূন্যতম পথ বা Short Way বলে দেয় ! 

Video (YouTube)


আর তাই মহান আল্লাহ্ বললেন আপন পালনকর্তার সহজ পথে চলমান হও (১৬:৬৯)!!!

চিন্তা করুন মহান আল্লাহ্ মাত্র দুই আয়াতের মাধ্যমে কত নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করেছেন ।






(অতি সংক্ষিপ্ত)

মোহাম্মদ মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।

Comments

Popular posts from this blog

সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী খেতে পারবেন ?

পৃথিবী গোলাকার না ডিম্বাকার!

নূহ আ:এর নৌকা ও বিশ্ব স্বীকৃতি ।