সমগ্র পৃথিবীতে প্রাণীর অভিযোজন
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
সমগ্র পৃথিবীতে প্রাণীর অভিযোজন (পবিত্র কুরআনের সাক্ষ্য) ।
সহজ অর্থে অভিযোজন হলো
কোন প্রাণী তার পরিবেশে নিজেকে ভালমত খাপখেয়ে বেঁচে থাকার নাম । অভিযোজন প্রাণীর জন্য
অত্যন্ত জরুরী । কারন অভিযোজন ছাড়া প্রাণী পরিবেশে টিকে থাকা সম্ভব নয় । মহান আল্লাহ্
এ দুনিয়াতে বহু প্রাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন আবার পরিবেশে বাঁচার জন্য তাদের মধ্যে নানা রকম
কৌশল জিনের মধ্যে সেটআপ বা বসিয়ে দিয়েছেন । অভিযোজন না থাকলে বিচিত্র পৃথিবীর জলবায়ুতে
বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর অস্তিত্ব থাকত না । ফলে মানুষ টাকা খরচ করে বিভিন্ন দেশ বা
মহাদেশে ঘুরত না আর কোটি মানুষের জীবিকা উপার্যন হতো না । যাক পরের কথায় আসি । অভিযোজন
বুঝার জন্য একটা উদাহরন দেই তাহলে ধারনা পরিষ্কার হবে ।
মহান আল্লাহ্ বলেন : এটি আল্লাহর হেদায়েত। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা,
এপথে চালান (নূহ, ইসহাক, এয়াকুব, দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা , হারুন, যাকারিয়া,
ইয়াহিয়া, ঈসা, ইলিয়াস, ইসরাঈল, ইয়াসা, ইউনূস, লূত আঃ এর কিছু বংশধর)। যদি তারা শেরেকী
করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত (০৬:৮৮)।
বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি
হয় তাই এখানকার পরিবেশ সবুজ তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোষাকের রং সবুজের মধ্যে বিভিন্ন
ছোপ বর্ণ । আবার আরব দেশে বৃষ্টি হয় না কিন্তু মরুভূমি । যার বর্ণ অনেকটা বাদামী তাই
ঐ পরিবেশে সহজে মিশে যাবার জন্য তাদের পোষাকের বর্ণ অনেকটা বাদামী কালার হয় (চিত্রঃ০১)।
চিত্রঃ০১ |
এবার জন্তুর ক্ষেত্রে
আসি , আমাদের বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তার মানে স্বভাবিক তাপমাত্রা
ফলে আমাদের বা এ উপমহাদেশের প্রাণীর ( গরু ) চামড়া থাকে স্বাভাবিক এবং লোম ছোট ছোট
। কিন্তু অতি শীত প্রধান দেশ উত্তর মেরুর কথা চিন্তা করি , যেমন কানাডা যেখানে শীত
কালে মাসের পর মাস মাইনাস ৩০ এর নীচে থাকে । সেখানে বাংলাদেশের গরুকে খোলা ময়দানে
শীতকালে রাখলে তা মরে শক্ত বরফ হয়ে যাবে । তাহলে সে অঞ্চলের প্রণীরা কিভাবে বাঁচে
? তদের ঐ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য মহান আল্লাহ্ তাদের শরীরে পুরু চর্বির স্তর ও লম্বা
লম্বা পশম তৈরী করে দিয়েছেন যাতে প্রচন্ড শীতেও তারা কোনরকম অসুবিধে ছাড়াই বেঁচে থাকতে
পারে ।
মেরু ভাল্লুক , যা মেরু
অঞ্চলে বরফের মধ্যে বসবাস করে আর সেই স্থানের
তাপমাত্র প্রায়ই মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর
নীচে চলে যায় । মেরু ভাল্লুকের প্রধান খাদ্য সিল মাছ ও ছোট প্রজাতির তিমি মাছ । শীতকালে
আর্কটিক সাগর এর উপরিভাগ পুরোটাই বরফে আবৃত থাকে ফলে মেরু ভাল্লুক সহজে বরফ খুঁড়ে কিংবা
বরফ ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কেটে খাবার সংগ্রহ করে । এরকম বরফ পরিবেশ না থাকলে সে খাবর
সংগ্রহ করতে পারত না ফলে মারা যেত । সে বরফ পানিতে দিব্যি সাঁতার কাটতে পারে , কারন
হচ্ছে তার চামড়ার নীচে পুরু চর্বির স্তর ও লম্বা লম্বা পশম থাকে যা তাকে প্রচন্ড বরফ
এর হাত থেকে বাঁচায় (চিত্রঃ০২)।
চিত্রঃ০২ |
এবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড়
রেইন ফরেষ্ট আমাজন এ দিকে তাকলে বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন অভিযোজন দেখা যায় । যেমন
,আমাজন বন খুবই ঘন এবং সবুজ তাই Emerald
Tree Boa সাপটিকে মহান আল্লাহ্ সবুজ বানিয়ে দিয়েছেন যাতে সে সবুজ গাছের সাথে মিশে থাকে
এবং সহজে শিকার করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে । আবার Python সাপটির বর্ণ অনেকটা বাদামী ফলে
সে অতি সহজে শুকনো ডালের সাথে মিশে থাকে এবং শিকার কাছাকাছি আসলেই তা লুফে নেয় (চিত্রঃ০৩)।
চিত্রঃ০৩ |
যাক এবার মূল কথায় আসিঃ মহান আল্লাহ্ বলেন
অনুবাদ : তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা
হয়েছে? (সূরা গাশিয়া ৮৮:১৭)
আপনি যদি এ আয়াতের ব্যাখ্যা
হিসেবে পুরানো তাফসীরে খোঁজেন (মহান আল্লাহ্ তাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন)
তাতে লেখা আছে ,
“ তারা (কাফের’রা) দেখুক তাকে (উট) কত বৃহৎ আকার দান করেছি আর কত শক্তি
দিয়েছি তার পরেও তা তোমাদের অনুগত্য করে এ ছাড়াও মাংস , দুধ ও পশম দ্বারা তোমাদের কাজে
আসে (তাফসীর আহসানুল বায়ান )’’ ,
“ উটের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে
যে ,তাকে অদ্ভূতভাবে এবং শক্তি ও সুদৃঢ়ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে । এতদসত্বেও এই যন্তু
অতি নম্র ও সহজভাবে বোঝা বহন করে থাকে এবং অত্যন্ত আনুগত্যের সাথে চলাফেরা করে (তাফসীর
ইবনে কাসীর)’’
, “ উট তোমাদের চেয়েও অনেক উঁচু হওয়অ সত্বেও তোমরা উটের পিঠে আরোহন
করে হর-হামেশা চলাফেরা করে (তাফসীরে মাযহারী) ’’ , ইত্যাদি ।
অর্থাৎ তখন এই আয়াতকে
ব্যাখ্যা হিসেবে তখন উটের আকার ও নম্রতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বর্ণনা করা হয়েছে ।
কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান
এর সাথে সাথে তাকে অন্যভাবে ও ব্যাখ্যা করে ,
উট যেহেতু মরুভূমির প্রাণী
তাই সে ভৌগলিক অবস্থান হিসেবে মরুভূমিতে কিভাবে বেঁচে থাকে এর অভিযোজনে এর প্রতি গবেষণারে
জন্য মহান আল্লাহ্ লক্ষ্য রাখতে বলেছেন । মরুভূমিতে তো অনেক কিছুই থাকে কিন্তু মহান
আল্লাহ্ বলছেন তারা কি লক্ষ্য করে না উটের প্রতি?
অর্থাৎ ভাল করে গবেষণা করে দেখ তাতে কি আছে ?
উটে আসলে এমন কিছু অভিনব
জিনিষ আছে যা সত্যিই অবাক করার বিষয় ।
(ক) উটের নাক যা সাধারন
প্রাণীর মত গোলাকার না হয়ে চ্যাপ্টা থাকে এর ফলে মরুঝড়ের সময় নাকে আর বালু প্রবেশ করতে
পারে না ।
(খ) পিঠে একটা উঁচু স্থান
থাকে যাকে বলে কুঁজ এবং এটি চর্বি দ্বারা তৈরী , মরুভূমিতে অনেক দিন খাবার না পেলে
সেই চর্বি থেকে সে খাবার গ্রহন করে বেঁচে থাকে। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে খাবারের মধ্যে
(শর্করা ,আমিষ , স্নেহ/চর্বি) প্রতি এককে চর্বিতে কয়েক গুন শক্তি বেশী জমা থাকে । চর্বি
ছাড়া অন্য খাবার হলে পর্যাপ্ত শক্তি পেতে হলে উটকে আয়তনে বেশী পরিমানে জমা রাখতে হতো
ফলে তারপক্ষে কুঁজ নিয়ে হাঁটা অতি কষ্টের হতো কিংবা একটু দুর্বল হলেই সে ঢলে পড়ত ।
(গ) উটের পায়ে গরুর মত
ক্ষুর আছে কিন্তু উটের পায়ের তলায় নরম ও চ্যাপ্টা প্যাড আছে যা গরুর মধ্যে নেই । ফলে
উট বালুতে সহজে চলতে পারে আর এর পা কাদার মত বালুতে ডুবে যায় না ।
(ঘ) সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয়
হলো উট একবারে পানি পান করে টানা ৩৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং এরসাথে ৫০০+ মাইল হাঁটতে
পারে । আর যদি কোথাও পানি পায় তাহলে সে মাত্র ১৩ মিনিটে ১১৩ লিটার পানি পান করতে পারে
! অতিরিক্ত গরমে তার দেহের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠানামা করে ফলে তার ঘাম হিসেবে
পানির অপচয় হয় না । তার দেহের পশমের কারনে অতিরিক্ত মরুতাপ হতে তাকে রক্ষা করে (চিত্রঃ০৪)।
চিত্রঃ০৪ |
সুতরাং এখানে মহান আল্লাহ্
বুঝাতে চেয়েছেন , উটের অভিযোজনের এসব সাইন্টিফিক মাত্র কয়েক দশক আগে মানুষের নজরে আসে
কিন্তু কুরআনের তার কথাটা ১৪৫০ বছর পুরানো ।
অথছ উটের অভিযোজনের এসব সাইন্টিফিক বিষয়
গুলো কয়েক দশক আগেও জানত না । আর বিজ্ঞানের আরো উন্নতির ফলে মানুষ প্রত্যেক প্রাণীকে
আরো ভালভাবে দেখুক , আর লক্ষ্য করুক বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান ভেদে যে অভিযোজনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় তা কি
এমনিতে এমনিতে সৃষ্টি হয়েছে নাকি কেউ পরিকল্পনা করে তার মধ্যে বসিয়ে দিয়েছে ?
(অতি
সংক্ষিপ্ত)
মোহাম্মদ
মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
এনভায়রনমেন্টাল
সাইন্স
নোয়াখালী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।
Comments
Post a Comment
মন্তব্যঃ