পাহাড়কে পৃথিবীতে পেরক হিসেবে রেখেছেন
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
পাহাড়কে পৃথিবীতে পেরক
হিসেবে রেখেছেন (পবিত্র
কুরআন কি বলে?
)
“পৃথিবীর অনেক অংশ জুড়ে
রয়েছে পাহাড় । এগুলো কিন্তু এমনিতে এমনিতে সৃষ্টি করা হয় নি । পরিবেশগত দিক দিয়ে বিবেচনা
করলে এর অনেক গুরত্ব আছে তার সাথে সাথে রয়েছে আরেকটা মুখ্য দিক তা হলো পৃথিবীতে পাহাড়কে
স্থাপন করেছেন পেরক হিসেবে ।’’
মহান আল্লাহ্ বলেন : যিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর
পালনকর্তা, দয়াময়, কেউ (বিচারের দিনে) তাঁর সাথে কথার অধিকারী হবে না। যেদিন রূহ ও
ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা
বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে (নাবা ৭৮:৩৭-৩৮)।
পরিভাষাঃ
১. “প্রফেসর ফ্রাঙ্ক প্রেস”
Earth বইটির
রচয়িতাদের অন্যতম। তিনি ছিলেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের বিজ্ঞান-বিষয়ক
উপদেষ্টা। পরবর্তীতে ১২ বছর তিনি ছিলেন ওয়াশিংটনের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি প্রধানের
দায়িত্বে। ডাঃ ফ্রাঙ্ক প্রেস বলেন-পর্বতের
অত্যন্ত গভীর শিকড় রয়েছে যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে। বুঝতে হলে অনেকটা ভাসমান বরফের অথবা খুঁটির মতো যার ৯০% থাকে
পানির নীচে ও ১০% থাকে উপরে।
২. ISOSTACY : উৎপত্তি গ্রিক শব্দ থেকে ísosঅর্থ সমান আর
stasis অর্থ স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা । অর্থাৎ
একটি মাধ্যাকর্ষনজনিত পর্যায় সমতা যা পৃথিবীর ক্রাস্ট (Crust) বা উপরিস্তরের
ও পৃথিবীর মেন্টাল (Mantle) স্তর (ক্রাস্ট এর নীচে) মাঝে থেকে ক্রাস্ট ভারসামম্য অবস্থায় ভাসমান থাকে ।
চিত্র : ০১
|
৩. প্লেট টেকটোনিক্স (Plate Tectonics): ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র
গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলিকে ধরা হয় শক্ত আবরন এর লেয়ার বা প্লেট আকারে
যা নিম্নস্থ ভ্রাম্যমান উষ্ণ গুরুমন্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটের বিচলন
(movement) ও পারস্পরিক ক্রিয়া ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য
ভূতাত্ত্বিক ঘটনাবলীর নিয়ন্ত্রক হয়। সোজা কথা যার উপর আমাদের মহাদেশ গুলেো কতগুলো
শক্ত আবরন বা প্লেটের উপর ভাসছে ।
চিত্র ০২
|
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে
বলেন :
অনুবাদ : এবং পাহাড়-পর্বত
সমূহকে পেরক স্বরূপ গেড়ে দিয়েছি (নাবা ৭৮:০৭)।
এবার আসি কিভাবে পাহাড়
সৃষ্টি হয় ?
ভূতত্ববিদগনের তথ্যানুসারে,
যে ভারী ভারী বড় প্লেটগুলো পৃথিবীর উপরের শক্ত স্তর সৃষ্টি করে, সেগুলো যখন নড়াচড়া
আর সংঘর্ষের ফলে প্লেট যখন পরস্পর ধাক্কা খায় তখন শক্তিশালী প্লেটটি অন্য প্লেটের নীচে
গড়িয়ে চলে যায়, তখন উপরের প্লেটটি বেঁকে গিয়ে পর্বত ও উঁচু উচুঁ জায়গার জন্ম দেয়। নিচের
স্তরটি ভূমির নীচে অগ্রসর হয়ে ভেতরের দিকে এক গভীর প্রসারণের জন্ম দেয়। তাহলে বলতে
পারি পর্বতের রয়েছে দুটো অংশ, উপরে যেমন একটি অংশ যেমন থাকে, তেমনি নীচের দিকে গভীরে
এর বিশাল অংশ বিস্তৃতি রয়েছে।
তার মানে প্লেট গুলো ধাক্কার
ফলেই উঁচু স্থান গঠিত হয় আর তাই হলো পাহাড় । আর এই পাহাড়ই প্লেট গুলোকে পরেকের মত শক্ত
করে ধরে রাখে ।এভাবে পাহাড় পৃথিবীর প্লেট গুলোকে উপরের স্তর বা ক্রাস্টকে দৃঢ়ভাবে আটকে
রাখে আর ম্যাগমা / লাভা স্তরের উপরে কিংবা
প্লেটগুলোর মাঝে ক্রাস্ট এর চলাচলকে প্রতিরোধ করে।
চিত্র ০৩ |
এবার যদি পৃথিবীর প্লেট
গুলোকে কাঠের তক্তার সাথে তুলনা করি , তাহলে একটা কাঠের উপর আরেকটা কাঠ রেখে যদি পেরক
মারা হয় তাহলে যে অবস্থা সৃষ্টি হয় ঠিক পৃথিবীর প্লেট গুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে দুইটি
প্লেটের মধ্যবর্তী স্থানে উঁচু অংশ সৃষ্টি হয় যার শিকড় দুইট প্লেটের নীচু পর্যন্ত
বিস্তৃতি থাকে ।
পর্বতমালার এরূপ ধরনকে
বলা হয় ISOSTACY (চিত্র ০১)।
তাহলে মূল কথা হলো টেকটোনিক
প্লেট গুলো ম্যাগমা বা লাভার উপর ভাসতে থাকে এক সময় শক্তিশালী সংঘর্ষের ফলে উঁচু পাহাড়
সৃষ্টি হয় এবং যার পাদদেশ থাকে একবারে অনেক গভীরে যা দেখতে অনেকটা পেরকের মত যা কিনা
দুইটা প্লেটকে শক্তভাবে ধরে রাখে । ফলে টেকটোনিক প্লেট গুলো আর নড়াচড়া করে না (চিত্র ০৩)।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ্
বলেন : আর আমি জমিনের উপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি যাতে তাদের নিয়ে জমিন ঝুঁকে
না পড়ে (২১:৩১)।
“প্রফেসর ফ্রাঙ্ক প্রেস”
Earth বইটির রচয়িতাদের অন্যতম তিনি তার বইতে
পাহাড়কে এভাবে চিত্রায়িত করেছেন (চিত্র ০৪):
চিত্র
০৪ : মাটির নিচে পাহাড়ের গভীর শিকড় বিদ্যমান। (Earth, প্রফেসর ফ্রাঙ্ক প্রেস ও সিফার:৪১৩
পৃষ্ঠা)
|
অন্য একটি বই Anatomy
of the Earth তে এভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে (চিত্র ০৫) ।
চিত্র-০৫:
চিত্রে পাহাড়কে পেরেকের মত দেখা যাচ্ছে মাটির গভীরে যার রয়েছে শিকড়। (Anatomy of
the Earth, ২২০ পৃষ্ঠা)
|
এ আবিষ্কার গুলো হয়েছে
মাত্র কয়েক বছর আগে অথছ পাহাড় সমন্ধে সেই কুরআনের আয়াতগুলো ওহী হিসেবে শেষ নবী মুহাম্মদ
(সাঃ) উপর নাযিল হয়েছিল ১৪৫০ বছর আগে !
(অতি সংক্ষিপ্ত)
মোহাম্মদ
মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
এনভায়রনমেন্টাল
সাইন্স
নোয়াখালী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।
Comments
Post a Comment
মন্তব্যঃ