বায়ুমন্ডলে সুরক্ষিত ছাদ ।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ 

বায়ুমন্ডলে সুরক্ষিত ছাদ (পবিত্র কুরআন কি সাক্ষ্য দেয় ?)

ছাদ মানেই তো মাথার উপর সুরক্ষা শক্ত দেওয়াল বা দুর্গ । কিন্তু আপনি হাজার চেষ্টা করলেও তা কখকন খুজে পাবে না । তাহলে মহান আল্লাহ্ সমন্ধে কি বুঝাতে চেয়েছেন ? আসুন একটু পরেই আমরা বুঝার চেষ্টা করব ।


মহান আল্লাহ্ বলেন : যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তাআলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা হাশর ৫৯:২১) ।


প্রথমে একটু আরবী এক বচন ও বহুবচন জেনে নেই ।

আরবীতে একবচন শব্দ আকাশ বলতে বুঝায় সামায়া (السَّمَاء) আর , বহুবচন শব্দ আকাশমন্ডলী বলতে বুঝায় সামাওয়াত (سَمَاوَاتٍ  ) ।  সামায়া (السَّمَاء) শব্দটি ব্যবহৃত হয় আমাদের নিকটবর্তী অকাশকে / বায়ুমন্ডলকে। যেমন আল্লাহ্ বলেন  “তিনিই সেইজন যিনি আকাশ থেকে তোমাদের জন্য পানি বর্ষান, তা থেকে হয় পানীয় জল আর তা থেকে হয় গাছগাছড়া যাতে তোমরা পশুচারণ কর।’’ সূরা ১৬:১০ । সামাওয়াত (سَمَاوَاتٍ  ) বহুবচন শব্দটি ব্যবহৃত হয় বিশ্বজগত নিয়ে যেমন আল্লাহ্ বলেন “মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন সত্যের সাথে নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে মুমিনদের জন্য ” সূরা ২৯:৪৪ ।

আরো উদাহরন :
১. সামায়া (السَّمَاء) একবচন : ০৬:০৬ , ১১:৫২ , ২১:১৬ ,  ৪০:৬৪, ৬৭:০৫, ৭১:১১ ।
২. সামাওয়াত (سَمَاوَاتٍ  ) বহুবচন : ০২:২৯ , ৪১:১২ , ৬৫:১২ , ৬৭:০৩, ৭১: ১৫ ।

এবার আসি মূল আয়াতে , মহান আল্লাহ্ বলেন :


অনুবাদ : আর  (নীচের) আসমানকে এক সুরক্ষিত ছাদ বানিয়েছি । কিন্তু এরা এসব নিদর্শনের প্রতি ভ্রক্ষেপমাত্র করে না । (সূরা আম্বিয়া ২১:৩২) ।

ব্যাখ্যা ০১ : ওজন স্তর ।

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম পারমানবিক বোমা , কেন বলতে পাবেন ? কারন বোমা বিস্ফোরিত হলে তার থেকে প্রচুর তাপ ও তেজষ্ক্রিয় বের হয় যার ফলে সব ধ্বংস হয়ে যায় । আবার যারা কোন রকম বেঁচে থাকে তারা আবার তেজষ্ক্রিয়তার ফলে ক্যান্সারে মারা যায় । 

সূর্য ৭০ ভাগ হাইড্রোজেন আর ২৮ ভাগ হিলিয়াম এবং বাকি ২ ভাগ বিভিন্ন ধাতুর (কার্বন, নিয়ন, লোহা) সংমিশ্রণে গঠিত। আমাদের সূর্য কাজ করে ঠিক হাইড্রোজেন পারমানবিক বোমার মত । ফিউশন বিক্রয়ার  কারনে সূর্যের কেন্দ্রে হাইড্রোজেন থেকে  হিলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং বিপুল শক্তি ও তেজষ্ক্রিয় রশ্মি উৎপন্ন হচ্ছে।


চিত্রঃ ০১ সূর্যের কেন্দ্রের ফিউশন বিক্রিয়া 
বিক্রিয়া : হাইড্রোজেন + হাইড্রোজেন = হিলিয়াম + বিপুল শক্তি + তেজষ্ক্রিয়

সূর্য থেকে যে রশ্মিটি সরাসরি পৃথিবীতে আসে তার নাম আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন বা অতিবেগুনী তেজস্ক্রিয় রশ্মি। তাহলে সূর্যে উৎপন্ন এই তেজষ্ক্রিয় পৃথিবীতে আসলে আমার বেঁচে যাই কেন ???

আমরা জানি বায়ুমন্ডলের দ্বিতীয় স্তর স্ট্রাটোমন্ডলে রয়েছে একটি স্ত যার নাম ওজন স্তর । এই ওজন স্তর থাকার করনে তা সকল অতিবেগুনী তেজস্ক্রিয় রশ্মি চুষে নেয় । আর এই ওজন স্তর না থাকলে অতিবেগুনী তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে সব ধ্বংস হয়ে যেত । বিশেষ করে চোখে ছানি পড়া , ত্বকে ক্যান্সার সহ ইত্যাদি ।

সুবহানাল্লাহ্ কত সুশৃঙ্খল একটু লক্ষ করুন :

সূর্যে আনবিক বিক্রিয়া (বিপুল তাপ + তেজষ্ক্রিয়) » পৃথিবীতে সূর্যের তাপ  গ্রহন  » বায়ুমন্ডলে ফিল্টার (ওজন স্তরে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি শোষন) » উপকারী রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পতিত (তেজষ্ক্রিয় রশ্মিকে প্রতিফলিত করে মহাশূন্যে প্রেরন) » জীবজগৎ বেঁচে আছি ।

[বির্বতনবাদীরা তারপরেও বলতে চায় সকল কিছু এমনিতে সৃষ্টি হয়েছে এতে কোন আল্লাহর (সৃষ্টিকর্তার) অস্তিত্ব নেই !]

ব্যাখ্যা ০২ : পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র  বা Venn Allen belt

পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোর বা মজ্জার সিংহভাগই লোহা। ফলে এই গলিত লৌহকোরের কারণে পৃথিবী একটি বিশাল চুম্বকের ন্যায় আচরণ করে। এক ধরনের চৌম্বক ক্ষেত্র যা পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ থেকে শুরু করে মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে ক্ষেত্রটি সূর্য থেকে উৎপন্ন সৌর বায়ুর / সৌর ঝড় সাথে মিলিত হয় [সৌর ঝড় হচ্ছে সূর্য থেকে সৃষ্ট এক প্রকার শক্তিশালী তেজষ্ক্রিয় ঝড় ]। সূর্য থেকে সেই কণা ধেয়ে চলেছে মহাকাশের দিকে৷ আবার পৃথিবীর উপর আঘাত হেনে চলেছে কসমিক পার্টিকল বা মহাজাগতিক কণা যারা উচ্চ তেজষ্ক্রিয় শক্তি বিশিষ্ট ৷ মহাজাগতিক কণার উৎস হচ্ছে আমাদের সৌর জগতের বাহিরে এমন কি আমাদের গ্যালাক্সির বাহিরে ।

স্যার Venn Allen পৃথিববি বাসীর কাছে গবেষনালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করে বলেন যে,- আমাদের পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী Magnetic field আছে যা আমাদের বায়ুমন্ডলের চারিপাশে একটি বেল্টের মতো বলয় সৃষ্টি করেছে, পরবর্তীতে আরো গবেষনায় বিজ্ঞানীগন নিশ্চিন্ত হন এবং তারঁ নামানুসারে এ বলয়ের নামকরন হয় “Venn Allen belt”

ভিডিও : Venn Allen belt


আমাদের গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র সেই ধাক্কা সামলাচ্ছে৷ এই বলয় না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বই থাকতো না৷


চিত্রঃ ০২ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের

তার মানে  (নীচের) আকাশ বলতে [ সামায়া (السَّمَاء) ] শুধু বায়ুমন্ডল বুঝায় না বরং বরং একটা একটা নির্দিষ্ট অসীম সীমা কে বুঝায় ।


ব্যাখ্যা ০৩ : উল্কাপাত থেকে রক্ষা ।

উল্কা হল মহাকাশে পরিভ্রমণরত পাথর বা ধাতু দ্বারা গঠিত ছোট মহাজাগতিক বস্তু যা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুর সংঘর্ষে জ্বলে উঠে। তখন একে উল্কাপাত বলে । বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুসারে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন [ ১ মেট্রিক টন = ১,০০০কেজি ] উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। ভূপৃষ্ঠ যে সকল উল্কাপণ্ডের অবশেষ পাওয়া যায়, তাদের বেশিরভাগের রঙ থাকে কালো। প্রচণ্ড উত্তাপে এদের বহির্ভাগ পুড়ে যাওয়ার কারণে এগুলোর রঙ কালো হয়।

তাহলে উল্কাপিন্ডের কোথায় হতে সৃষ্টি হয় ? 

সাধারনত বেশিরভাগ গ্রহাণুই (Asteriod) থেকেই আমদের পৃথিবীতে আসে ।  গ্রহাণু-গুচ্ছ বেশিরভাগই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে ।

চিত্রঃ ০৩ সৌরজগতে গ্রহাণুর অবস্থান ।
বিচুত্যি বা মাহাকর্ষের টানে গ্রহাণু কক্ষপথ থেকে বের হয়ে আসে এবং পৃথিবীতে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ কালে বায়ুমন্ডলের সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষে পৃথিবীতে পৌঁছার আগে তা পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিংবা খন্ড আকারে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে আর তাকে আমরা উল্কা বলি । কিছু কিছু উল্কা অন্যভাবেও পৃথিবীতে প্রবেশ করে , যেমন ধুমকেতু থেকে । ধারনা করা হয় উল্কা জাতীয় কিছুর আঘাতেই ডাইনোসর পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ।

যাই-হোক কুরআনের এই আয়াত টি খুবই গভীর অর্থ বহন করে । যা নাযিল হয়েছিল শেষ নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর । কুরআন আল্লাহর বাণী বলেই শত শত বছর ধরে অবৃকিত অবস্থায় আছে । যেহেতু মহান আল্লাই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তাই তিনি সব কিছু নিগুড় তথ্য তার কাছে জমা । দিন দিন বিজ্ঞান যত আবিষ্কার হচ্ছে মহান আল্লাহ্ কুরআন ততবেশী শক্তিশালী হচ্ছে । মহান আল্লাহ্ বলেন : কিন্তু এরা এসব নিদর্শনের প্রতি ভ্রক্ষেপমাত্র করে না (২১:৩২)।

©


                                                                                                            (অতি সংক্ষিপ্ত )



                মোহাম্মদ মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
                  এভায়রনমেন্টাল সাইন্স (৪ র্থ বর্ষ)
               নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।

Comments

Popular posts from this blog

সমুদ্রের কোন কোন প্রাণী খেতে পারবেন ?

পৃথিবী গোলাকার না ডিম্বাকার!

নূহ আ:এর নৌকা ও বিশ্ব স্বীকৃতি ।