পৃথিবী কি সৃষ্টি জীবজগৎ এর জন্য ?
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
পৃথিবী কি সৃষ্টি জীবজগৎ এর জন্য ? (পবিত্র কুরআন কি বলে?)
(মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে
, তা না হলে অনুধাবন করা যাবে না )
বর্তমান বিজ্ঞান অনেক
আধুনিক হয়েছে । এখন মানুষ আর অন্ধত্বকে বিশ্বাস করতে চায় না । বিজ্ঞান আধুনিক হবার
সাথে সাথে পবিত্র কুরআন বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীদের কাছে আরো কৌতুহলী হয়ে উঠেছে । মুসলিমরা
কুরআনে যা বলেছে তাই অকপটে বিশ্বস করি কিন্তু নাস্তিকেরা ঐভাবে মানতে নারাজ , তারা
চায় আরো বাস্তব প্রমাণ ও যুক্তি ।
মহান আল্লাহ্ বলেন : তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষকে, তিনি তাকে শিখিয়েছেন
সুস্পষ্ট ভাষা, সূর্য ও চন্দ্র হিসেব মতো চলেছে , আর তৃণলতা ও গাছপালা আনুগত্য করছে
, অতএব তোমাদের উভয়ের প্রভুর কোন্ অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?[সূরা আর-রাহমান
৫৫ : ৩-৫ , ১৬]
এখন আপনাকে একটা প্রশ্ন
করি :
সৌর জগৎতে কয়টি গ্রহ আছে ? আপনি ফট করে বলে ফেলবেন
আট‘টি ।আর না পারলেও কাছাকাছি সংখ্যা বলে ফেলবেন । সৌর জগৎতে একমাত্র গ্রহ হচ্ছে পৃথিবী
যার মধ্যে বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস ।
চিত্র : ০১ পৃথিবী |
তবে প্রাণী জগৎ বেঁচে থাকর জন্য এর মধ্যে বয়েছে সুনির্দিষ্ট ফিজিকাল সাইকেল (Physical cycle) ।
যেমন : (১) বেঁচে থাকার জন্য বাতাসে সঠিক পরিমান অক্সিজেন (প্রায় ২১%) বিদ্যমান আছে ,কিন্তু এর চেয়ে বেশী হলে শ্বাস নিতে অসুবিধে কিংবা জ্বালাতন সৃষ্টি হতো ।
(২) অভিকর্ষ বল একটু কম হলে বায়ুমন্ডল কে আর ধরে রাখা যেত না কারন পৃথিবী ঘূর্ণয়ন এর ফলে তা ছিটকে পৃথিবী থেকে বরে হয়ে যেত ।
(৩) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস । আমরা বিশ্ব উষ্ণতা সম্পর্কে সবাই জানি ,ধরা হয় যে কয়েক ডিগ্রি তাপমাত্র বেড়ে গেলে ১/৩ জীববৈচিত্র হারিয়ে যাবে ।
(৪) মোট পানির ৯৭% লবনাক্ত বা সাগরের পানি বাকী ৩% ভাগ স্বাদু পানি । আবার এই ৩% ভাগ এর মধ্যে ২ % মেরু অঞ্চলে বরফ আকারে আর ১% এ মধ্যে বেশীর ভাগই জমা আছে ভূগর্ভস্থে আর লেকে/হ্রদে তারপর খুবই সামান্য অংশ আমরা খাবার পানি হিসেবে পেয়ে থাকি । আবার প্রত্যেক নদী কোন না কোন ভাবে সাগরে মিশে গিয়েছে , জোয়ার ভাটার সময় নদীর পানির উচ্চতা অনেক বাড়ে কমে কিন্তু কখনও লবনাক্ত পানি আর নদীর পানি মিশে একাকার হয় না ।
(০৫) আমাদের বায়ুমন্ডলে আছে Venn Allen belt , ওজন স্তর যা সৌর ঝড় ও সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে তা না হলে আমাদের জীবগৎ ধ্বংস হয়ে যেত ।
(০৬) মহান আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন গাছ ,মৌল ,অনুজীব ইত্যাদি । যার দ্বারা আমার সবসময় ঔষধ , খাদ্য , এন্টিবায়োটিক , জ্বালানী , বিদ্যুৎ ইত্যদি ।
(০৭) রয়েছে খাদ্য চক্র (Food Cycle) , যদি একটি উপাদান কমে যায় কিংবা নষ্ট হয় যায় তাহলে বিশাল জীবজগৎ এ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় যেমন , সাগরের যদি লবনাক্ততার পরিমান কমে যায় তাহলে অনেক খনিজ উপাদান কমে যাবে যার ফলে ফাইটোপ্লাংটন ও জুপ্লাংটন এর উৎপাদন কমে যাবে আবার এদের উৎপাদন কমে গেলে ছোট মাছ কমে যাবে যার প্রভাব পড়বে সরাসরি বড় মাছ এর উপর যার ফলে নিশ্চিত ভাবে মানুষের খাদ্যের প্রভাব পড়বে ।
তাহলে দেখুন পৃথিবীটাকে কি জটিল নিয়মে সাজানো হয়েছে !
মহান আল্লাহ্ বলেন :
অনুবাদ : আর তিনি পৃথিবীকে বানিয়েছেন সৃষ্ট জীবের জন্য (আর-রাহমান ৫৫ : ১০)।
মহান আল্লাহ্ বলেন :
অনুবাদ : আর তিনি পৃথিবীকে বানিয়েছেন সৃষ্ট জীবের জন্য (আর-রাহমান ৫৫ : ১০)।
ü বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে নিকটে তার পরেও
তাপমাত্র হচ্ছে -১৭৩ থেকে ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
।
ü শুক্রতে তাপমাত্রা ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ।
ü মঙ্গলের বায়ুতে ৯৫% কার্বন-ডাই-অক্সাইড ।
ü শনির বায়ুমন্ডলে আছে ৯৬.৩% হাইড্রোজেন (আমরা জানি হাইড্রোজেন নিজে নিজে জ্বলে)।
ü বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে ১,২০০ গুন বড় তাই বায়ুর
চাপ পৃথিবী থেকে ১,০০০ গুন বেশী ।
ü ইউরেনাস সূর্য থেকে দূরে বলে এর গড় তাপমাত্রা
-১৯৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ।
নেপচুনও অতি ঠান্ডা গ্রহ ।একবার
সূর্যকে একার প্রদক্ষিন করতে সময় নেয় ১৬৫ বছর ।
চিত্র: ০২ সৌরজগৎ
|
মহান আল্লাহ্ যখন আদম
(আঃ) কে বনানোর ইচ্ছা করলেন তখন তিনিন ফেরেশতাদের বললেন : আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে
এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা
নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। (সূরা বাকরা ০২:৩০)
।
তারপর আদম (আঃ) থেকে বহু
নবী এই পৃথিবীতে আগমন করেছে আর শেষ নবী হচ্ছে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) । তিনি সর্বশেষ আসমানী
কিতাব কুরআন নিয়ে এসেছিলেন প্রায় ১৪৫০ বছর আগে । মৃত্যুর পর সকল মানুষ একদিন জীবিত হবে
তরি পর হবে হাশর তারপর জান্নাত ও জাহান্নাম ।
আগের দিনের মানুষ খালি
চোখে যা দেখত তাই নিয়ে সব মনের কল্পনা বানাতো । কিন্তু মানুষ এখন আরো এডভান্সড তার
দৃষ্টিসীমা আরো অনেক দূর অবধি পৌঁছে গেছে , বিশেষ করে হাবল
টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পরে ।
জ্যোতির্বিদরা মনে করছেন
দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় ১০০ বিলিয়ন (১০+১১) গ্যালাক্সি আছে। এই গ্যালাক্সিরা
খুব ছোট হতে পারে, যেমন মাত্র ১০ মিলিয়ন (বা ১ কোটি) তারা সম্বলিত বামন গ্যালাক্সি
অথবা খুব বড় হতে পারে, দৈত্যাকার গ্যালাক্সিগুলিতে ১০০০ বিলিয়ন তারা থাকতে পারে।
আমরা যে গ্যালাক্সিতে
বসবাস করি তার নাম আকাশগঙ্গার
যার ব্যাস আনুমানিকভাবে ১০০,০০০ আলোকবর্ষ বা
৯×১০১৭ কিলোমিটার। ধারণা করা হয়
এই ছায়াপথে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ বিলিয়ন পর্যন্ত নক্ষত্র রয়েছে।
আর নাসার বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের গ্যালাক্সি (যার নাম আকাশগঙ্গা ) তাতে কমপক্ষে ১০০
বিলিয়ন গ্রহ আছে যারা আবার নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে ঘোরে তার মধ্যে সূর্য একটি নক্ষত্র
!!
চিত্র : ০৪ The Milky Way /আকাশ গঙ্গা বা আমাদের গ্যালাক্সিতে
বিভিন্ন গ্রহের বিন্যাস (NASA)
|
কিন্তু ইদানিং নাসা আবার
বলছে , আমরা যত গ্যালাক্সি হিসেব করেছি এখন সংখ্যায় তার চেয়েও অনেক বেশী ।
হাবল টেলিস্কোপ যে সব
দেখতে পায় তা কিন্তু নয় । এখনও অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে । এত কিছু দেখে তাদেরই ঈমান
বৃদ্ধি পাবে যারা কেবল মহান আল্লাহ্ না দেখে বিশ্বাস করবে ।
যাই
হোক এতকিছু গবেষণার পরেও তারা পৃথিবী নামক গ্রহটিতে বসবাস করা মানুষের মত আর কোন গ্রহ
খুঁজে পেল না কিংবা খুঁজে পেল না এমন গ্রহ যেখানে পৃথিবীর মত অসংখ্য প্রাণী / গাছপালা
ভরপুর !
Alien
Life?
এখন বলবেন যে অ্যালিয়েন
/ ভিনগ্রহের প্রাণী সমন্ধে আমি কি বলব?
মহান আল্লাহ্ বলেন : তাঁর নির্দশন হচ্ছে স্বয়ং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি
, এ দুয়ের মাঝখানে যতো প্রাণী আছে তা তিনিই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন ; তিনি যখন চাইবেন
তখন এদের সবাইকে জমা করতে সক্ষম হবেন (৪২:২৯)।
আবার কুরআনে অনেক স্থানে মহান আল্লাহ্ বলেন ,
তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন (৬৭: ০৩)।
সাত স্তর আকাশ কে একত্রে
বলে আকাশমন্ডলী বা আসমানসমূহ । তার মানে মহান আল্লাহ্ জীব সৃষ্টি করে আসমান ও জমীনে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ।
আবার কুরআন থেকে প্রমাণিত
মানুষ আল্লাহ্ তায়লার সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ । কারন মহান আল্লাহ্ তার মাহান পবিত্র
রুহ থেকে তিনি আদম (আঃ) কে ফুঁকে দিয়েছিলেন (১৫:২৯)। এ কারনে মানুষ সাইজে ছোট হলেও দুনিয়ার
সকল কিছু সে নিয়ন্ত্রনে নিতে পারে ।
তাহলে বলতে পারি অন্য
গ্রহে জীব থাকতে পারে কিন্তু মানুষের মত বুদ্ধিমান নয় , (এখন পর্যন্ত ) যেমন কিছুদিন
আগে আবিষ্কৃত হয়েছে যে , অন্য গ্রহে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে । ©
(সংক্ষিপ্ত)
মোহাম্মদ
মুদ্দাচ্ছির ইসলাম
এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স (৪ র্থ বর্ষ)
নোয়াখালী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়
Comments
Post a Comment
মন্তব্যঃ