মেরু অঞ্চলের দিনের দৈর্ঘ্য
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
মেরু
অঞ্চলে
৬ মাস দিন আর ৬মাস রাত্র থাকে । আরেকটু ভাল বুঝতে হলে একটা উদাহরন দেই । যে সব মুসলিম
মেরু অঞ্চলের (সুইডেন , নরওয়ে ইত্যাদি) কাছাকাছি থাকে তাদের রোজার সময় দিনের দৈর্ঘ্য
প্রায় ২২ ঘন্টার উপরে থাকে । তাই দেখি পবিত্র কুরআন এ সমন্ধে কি সংকেত দেয় ?
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে
বলেন : বলুন (হে নবী) , আমার পালনকর্তার কথা লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়,
তবে আমার পালনকর্তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে (তারপর) সাহায্যার্থে
অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও ( লেখা শেষ হবে না) (সূরা কাহাফ ১৮:১০৯)।
আলোচ্য সূরা : সূরা কাহাফ {যার অর্থ
গর্ত (১৮ নং সূরা’র ৮৩ থেকে ৯৪ নং আয়াত )}।
পরিভাষা (terminology) :
1. যুলকারনাইন :
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত একজন দ্বিগবিজয়ী বিশ্বাসী বাদশাহ্ । যুলকারনাইন শব্দের অর্থ
দুই শিং । যেহেতু তার দখলে ছিল পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত তাই তাকে বলা হয় যুলকারনাইন
বা দুই শিং ওয়ালা।
2. ইয়াজুজ
ও মাজুজ : হাদীসে দাজ্জালের পাশাপাশি ইয়াজুজ ও মাজুজ (ইংরেজী
পরিভাষায় এদের বলে Gog & Magog)
এর কথা উল্লেখ্য আছে , এরা কিন্তু মানুষ জাতি। যদিও পবিত্র কুরআনে দাজ্জালের কথা সরাসরি
নেই কিন্তু ইয়াজুজ ও মাজুজ এর কথা সরারসরি উল্লখ্য আছে । পবিত্র কুরআনে কাহাফ (১৮ নং)
সূরা’র ৯৪ ও ৯৭ নং আয়াত এবং আম্বিয়ার (২১ নং) সূরা’র ৯৬ নং আয়াতে ইয়াজুজ ও মাজুজ এর
কথা উল্লেখ আছে।
3. বাইবেল
: মুসলিমরা বিশ্বাস করি পবিত্র ইনজিল
ঈসা (আঃ) এর কাছে অবতীর্ণ হয় । কিন্তু খ্রিষ্টানেরা তাদের মন মত পরবর্তন করতে করতে
নতুন রূপ দিয়েছে তার নাম বাইবেল । ফলে মুসলিমরা একে আর ইনজিল বলে বিশ্বাস করি না ।
এর দুইটা রূপ (ক) ওল্ড ষ্টেটমেন্ট (তাওরাতের
কিছু অংশ যা ইহুদীদের উদ্দেশ্যে হযরত মূসা আঃ এর কাছে নাযিল হয়) (খ) নিউ ষ্টেটমেন্ট (যাকে বলে ইনজিল তবে তা সম্পূর্ন ভাবে বিকৃত)। ওল্ড ষ্টেটমেন্ট এ আবার ৩৯ টি অধ্যায় আছে
আবার প্রতিটি অধ্যায়ের উপ-অধ্যায় আছে । নিউ
ষ্টেটমেন্ট এ আবার ২৭ টি অধ্যায় আছে আবার প্রতিটি অধ্যায়ের উপ-অধ্যায় আছে ।
মেরু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য : উত্তর মেরু পৃথিবীর
সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত বিন্দু । এর অন্য নাম সুমেরু বা ভৌগোলিক উত্তর মেরু। সুমেরুর
বিপরীতে পৃথিবীর অপর (দক্ষিণতম) প্রান্তে আছে কুমেরু (দক্ষিণ মেরু)। আরও সুনির্দিষ্টভাবে
বলতে গেলে, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের যে বিন্দুতে এর ঘূর্ণন অক্ষ পৃষ্ঠতলের সাথে মিলিত
হয় তাকে উত্তর মেরু বলে। সারা বছরই বরফ দ্বারা আবৃত থাকে আর গড় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের
নীচে । অতিরিক্ত ঠান্ডর কারনে কোন গাছপালা নেই,
প্রানীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেরু ভাল্লুক আর সিল মাছ ।
মূল কথায় আসি , আমরা আলোচনা করব সূরা কাহাফের ৮৩ থেকে ৯৪ নং আয়াত
। তার পূর্বে আমরা মানচিত্র সমন্ধে কিছু ধারণা নেই ।
মানচিত্র টি হচ্ছে ইউরো –এশিয়া’র । প্রথমে আমরা
Black Sea বা কৃষ্ণ সাগরের প্রতি নজর দেই সাগরের এর দক্ষিনে আছে তুরষ্ক ,পশ্চিমে
আছে ইউরোপ , উত্তরে আছে রাশিয়া এবং আরো উত্তরে আছে সুমেরু বা উত্তর মেরু ।
প্রশ্ন হচ্ছে এই সাগর কে Black Sea বা কৃষ্ণ সাগর বা
কালো বলা হয় কেন ? আসল কথা
হচ্ছে
সাগরের পানিতে হাইড্রোজেন সালফাইডের ঘনত্বের
কারনে একে কালো দেখায় ।
মহান আল্লাহ্ বলেন : তারা (অবিশ্বাসীরা) আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং
প্রত্যেক বিষয়ের উপায় উপকরণও দান করেছিলাম (১৮:৮৩-৮৪)।
যেহেতু তিনি
প্রচন্ড ক্ষমতাধর বাদশাহ্ ছিলেন তাই তিনি তার সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যেদিক ইচ্ছা
সে দিকে যাতায়াত করতেন ।
তারপর মহান আল্লাহ্ বলেন :
অবশেষে তিনি (যুলকারনাইন) যখন সুর্যের অস্তাচলে
পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে
দেখতে পেলেন (১৮:৮৬)।
তার মানে তিনি এমন স্থানে গেলেন যেখানে তিনি দেখতে পেলেন
সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে ডুবে যাচ্ছে । এখানে পঙ্কিল অর্থ ঘোলা বা কালো আর জলায়শয়
অর্থ সাগর , তার মানে কৃষ্ণ সাগর । কিন্তু কেন আমরা এই স্থান কে বেছে নিব ? পুরোটা
পড়লে বুঝতে পাবেন ।
তারপর
মহান আল্লাহ বলেন : অতঃপর তিনি (যুলকারনাইন) এক উপায় (পথের
যাত্রা) অবলম্বন করলেন (১৮:৮৯)।
তার মানে তিনি রাজ্য বিস্তারের জন্য আরো উত্তর
দিকে অগ্রসর হলেন ।
তারপর মহান আল্লাহ বলেন:
অনুবাদ:
অবশেষে তিনি (যুলকারনাইন) যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন
তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্য আলো থেকে আত্নরক্ষার
কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি (১৮:৯০)।
তার
মানে যুলকারনাইন শেষ পর্যন্ত আরো উত্তরের দিকে গেলেন যে স্থান মেরু অঞ্চল !!! কারন
সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন যারা সেখানে বসবাস করে তাদের উপর সারাদিন সূর্যের আলো দেখা
যায় । কারন সে স্থানে সূর্যে একবার উদয় হলে ৬ মাস আর অস্ত যায় না।
এবার
সেই স্থান থেকে তিনি চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন ।
আবার তিনি এক পথ ধরলেন (১৮:৯২)।
অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন, তখন তিনি সেখানে
এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ
ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর
ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন
(১৮:৯৩-৯৪)।
তার
মানে তিনি (যুলকারনাইন) মেরু থেকে ফিরে এসে দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন এবং
সেই স্থানের লোদের ভাষা ছিল বিশ্বে প্রচলিত ভাষা থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন । তারা বলল ইয়াজুজ
ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে ফলে তিনি তাদের মাঝে একটা দেওয়াল তুলে দেন ফলে তারা
ইয়াজুজ ও মাজুজ এর অত্যাচার থেকে রেহাই পায় এবং যুলকারনাইন আবার বলে দেন কিয়ামতের সময়
মহান আল্লাহ তাদের আবার ছড়ে দিবেন (১৮:৯৮)।
নীচে যুলকারনাইনের গতিপথ দেখানো হলো :
পয়েন্ট
০১ হলো কৃষ্ণ সাগর এখানেই তিনি দেখেছিলেন সূর্যেকে
পঙ্কিল বা কালো জলাশয়ে অস্ত যেতে (১৮:৮৬) , পরে
তিনি পয়েন্ট ০১ থেকে পয়েন্ট ০২ চলে যান সেই স্থান হচ্ছে মেরু এলাকা (১৮:৯০) । পরে পয়েন্ট ০২ থেকে ফিরে আসেন (১৮:৯২-৯৪) এবং ইয়াজুজ ও মাজুজ এর বিরুদ্ধে একটি দেওয়াল তুলে
দেন ।
তাহলে
এবার ইয়াজুজ ও মাজুজ এর অবস্থান সনাক্ত করি
তাদের অবস্থান সনাক্ত করতে পারলেই আমরা বুঝতে পারব আসলে যুলকারনাইন কোথায় ছিলেন
। কারন তিনি ইয়াজুজ ও মাজুজ কে দেওয়াল দ্বারা প্রতিরোধ করেছিলেন ।
ইয়াজুজ
ও মাজুজ যেহেতু মানুষ জাতি তাই তারা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করত ।
(০১) হাদীসের বর্ণনা মতে তাদের অবস্থান তুরষ্কের উত্তরে
।
(০২) বাইবেলের বর্ণনা মতে (ওল্ড ষ্টেটমেন্ট) হিষকিষেলের
কিতাবে (৩৮ ও ৩৯ অধ্যায়) তাদের অবস্থান রুশ ও তোবলক্স এবং মস্ককে (বর্তমান মস্কো) উল্লেখ
করা হয়েছে ।
(০৩) ইসরাঈলী ঐতিহাসিক ইউসিফুস ইয়াজুজ মাজুজ বলতে সিথিয়ান
কওম কে বুঝিয়েছেন – যাদের এলাকা ছিল কৃষ্ণসাগরের উত্তর পূ্র্বে ।
সিদ্ধান্ত:
যেহেতু সকলে বলছেন ইয়াজুজ মাজুজ এর অবস্থান রাশিয়া বা কৃষ্ণসাগরের আশেপাশে । আর কুরআনের বর্ণনা মতে যুলকারনাইন (চিত্রে)
পয়েন্ট ০১ থেকে পয়েন্ট ০২ তে ফিরে আসার পর ইয়াজুজ মাজুজ এর দেখা পেয়েছিলেন । তাহলে
ইয়াজুজ মাজুজ এর অবস্থান উত্তরে আবার যুলকারনাইন মেরু অঞ্চল ঘুরে আসেন যেখানে তিনি
দেখতে পান সূর্য সারাদিন (৬ মাস) আলো দিচ্ছে ।
©
(অতি সংক্ষিপ্ত)
এনভায়নমেন্টাল সাইন্স (৪ র্থ বর্ষ)
নোয়াখালী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
Comments
Post a Comment
মন্তব্যঃ